আমি তখন সোনালী ব্যাংক ফার্মগেট শাখা,ঢাকাতে সদ্য বদলী হয়েছি। ঐ শাখাতে ট্রেজারি চালুকরা হবে। ঢাকাতে ট্রেজারীর কাজ ক’রে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক নেই সেখানে ট্রেজারীর কাজ ক’রে থাকে সোনালী ব্যাংক। ঢাকা সিটিতে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে একা ট্রেজারী সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, ফলে সোনালী ব্যাংকের বিশটি শাখাতে ট্রেজারী চালান রিসিভ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তার মধ্যে ফার্মগেট অন্যতম। ফলে ট্রেজারীর কাজ জানা বিশ জন কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকাতে বদলী করা হয়। সেই সূত্রে আমাকে নওগাঁ থেকে ঢাকাতে বদলী করা হয়।
আমি ফার্মগেট শাখাতে যোগদান করলাম। তখনও ট্রেজারী চালু হয়নি,তাই আমার কোন কাজ নেই। ফলে যে কাউন্টারে ডিডি, এম,টি,
পে অডার লেখা হয়, আমি সেখানে বসে ঐ Instrument গুলোতে স্বাক্ষর করে দিতে লাগলাম।
ফার্মগেট শাখা থেকে পি,এস,সি /ও বি,সি,এস ফর্ম বিক্রয় করা হতো। ফলে ব্যাংকে ঐ ফর্ম ক্রয় করার জন্য, যারা চাকুরির আবেদন করবেন সেই সব সদ্য-পাশকরা ছেলে মেয়েদের ভিড় লেগে থাকতো। ফর্ম কেনার পর তারা পে অর্ডারটাও সোনালী ব্যাংক থেকে করে নিয়ে যেতো।
একদিন ফর্ম ক্রয় করার পর, একজন যখন পে অর্ডার করার জন্য কাউন্টারে দাঁড়ালেন তখন ঘড়ির কাঁটা তিনটা পেরিয়ে গেছে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বলে দিলেনঃ সময় শেষ। আজ আর হবে না।
কিন্তু ঐদিন ছিল আবেদন কারার শেষ তারিখ। আবেদন যিনি করবেন, তিনি অনেক অনুনয় বিনয় করেও কোন কাজ হলো না। শেষে আমাকে হস্তক্ষেপ করতে হলো। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে পে অর্ডার করে দিতে বলি। শেষে পে অর্ডারটা হলো, তিনি খুশি হয়ে চলে গেলেন।
চার বছর পরের কথা, আমি তখন ঢাকা থেকে বদলী হয়ে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা শাখায় কর্মরত। একদিন নজিপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক গণের বেতন বিলগুলো পাশ করে ক্যাশ কাউন্টারে পাঠাচ্ছি, একজন প্রভাষক বললেনঃ আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আমিঃ নাহ্,আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
প্রভাষকঃ আপনি ‘৯৮ সালে ফার্মগেট শাখায় ছিলেন, আপনি সে দিন আমাকে সাহায্য না করলে আমি দরখাস্ত করতে পারতাম না, আর আমার চাকরিটাও হতো না।
আমার তখন ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। কিন্তু তার চেহারা মনে করতে পারলাম না, কেননা প্রতিদিনই অনেকের জন্য এমন উপকার করতে হতো। তাই কারো মুখ মনে রাখা সম্ভব নয়, মাত্র কয়েক মিনিট দেখে। ঐ পে অর্ডারটা করে দেয়ার জন্য,আমি খুব ছোট একটা আদেশ দিয়ে ছিলাম মাত্র, যেটা আমার কাছে খুব ছোট্ট একটা কাজ ছিল। কিন্তু তার ফলা ফলটা দেখুন।
তাই যাঁরা এখন যে ক্ষমতা ধারণ করে আছেন, সেটা চাকুরিজীবী হতে পারেন বা রাজনীতিক হতে পারেন। আপনার ছোট্ট একটা উপকার অন্যের জীবনে এনে দিতে পারে স্বর্গীয় সুখ। তাই ক্ষমতা থাকতেই অন্যের উপকার করার চেষ্টা করুণ, ক্ষমতা চলে গেলে,ইচ্ছে করলেও কারো উপকার করতে পারবেন না।
হাঁ, যা বলছিলাম, তিনি নিজে থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কারণে,তাঁর সাথে আমার আন্তরিকতা বেড়ে গেল। তখনও তাঁর বিয়ে হয় নাই, ফলে আমাদের সম্পর্ক ক্রমেই গভীর হতে থাকলো। প্রায় আমাদের দেখা সাক্ষাত হতে লাগলো। বড় সুন্দর আমাদের দিন কাটতো। কালের স্রোতে তিনি বদলী হয়ে চলে গেলেন। বর্তমানে তিনি বিবাহ করেছেন। আমাদের বন্ধুত্ব আজও আছে। এখন তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু আমি তাঁর নামটা প্রকাশ করতে চাই না।
কবি ও লেখক
আবু হেনা মস্তোফা কামাল